গুজরাটের ‘কসাই’ আবার খুলেছে তার নতুন কসাইখানা কাশ্মীরে।

পপুলিজমের মুখোশে গণহত্যার রাজনীতি

পৃথিবীর বর্তমান প্রচলিত গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দু’টি রাষ্ট্রে গণহত্যার সাথে জড়িত ব্যক্তিরাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে বসেছেন। একদিকে দখলদার ইসরায়েল, যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় আসা যেন খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। অন্যদিকে আমাদের পাশের দেশ ভারত, যেখানে নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদি গুজরাটের বিভীষিকাময় গণহত্যা পরিচালনার পরও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

এটিই কি গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা নয়? ফাহাম আব্দুস সালামের সেই অবিস্মরণীয় ভাষায় বললে, এটা এক ডেসপিকেবল ট্র্যাজেডি, যেখানে একজন গণহত্যাকারী দেশের সর্বোচ্চ আসনে আসীন। তার থেকেও উদ্বেগের বিষয় হলো, ভারতের এই দলান্ধ পপুলিস্টরা আবার দখলদার ইসরায়েলের প্রধান সমর্থকদের একজন! ভারতের এই দলান্ধ পপুলিস্ট রাজনীতি শুধু দেশের অভ্যন্তরেই বিভেদ সৃষ্টি করছে না, বরং দখলদার ইসরায়েলের মতো রাষ্ট্রের প্রতি তাদের সমর্থন আমাদের এই উপমহাদেশীয় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় হুমকি।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা কে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। শেখ হাসিনা ১৬ বছর বাংলাদেশে নির্মম গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে, যার ফলে ইতিমধ্যে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন এক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারকে ব্যবহার করে ভারত সবসময় বাংলাদেশকে তাদের পদাবনত করে রাখতে চাইতো। কিন্তু ৫ ই আগস্টের মধ্য দিয়ে তাদের সেই সুদূরপ্রসারী হায়দ্রাবাদী পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রচণ্ড ভারতের শাসকদলের বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হয়ে যায়। আর এ ক্ষোভ প্রশমনের বদলে ভারত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা কে আশ্রয় দিয়ে উত্তেজনা আরও উস্কে দেয়। একটি গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে ও ভারতের এই স্বৈরশাসকের পক্ষালম্বন করা ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আরেকটি দুর্বলতা প্রকাশ করে, যেখানে এটি প্রমাণিত যে তারা গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং বাংলাদেশে বিগত সময়ের সকল অপকর্মে তাদের প্রত্যক্ষ মদদ ও সমর্থন রয়েছে।

ভারতের মতো একটি দেশ, দুই দুইজন গণহত্যাকারীকে রাষ্ট্রীয় মদদ দিয়ে আগলে রেখেছে। বাহ, কি চমৎকার গণতান্ত্রিক সাফল্য!

এবার আসা যাক আজকের মূল বিষয় কাশ্মীর নিয়ে। এক্ষেত্রে আজকের এই লেখার এই অংশের যুতসই শিরোনাম হয়

গুজরাটের ‘কসাই’ আবার খুলেছে তার নতুন কসাইখানা কাশ্মীরে

সীমলা চুক্তি ও পরবর্তীতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার পর থেকে কাশ্মীর হলো পৃথিবীর অন্যতম সেনাবহুল একটি অঞ্চল। যদিও কাশ্মীরে আসলে কত সৈন্য মোতায়ন আছে সেটি ভারত সবসময় গোপন রেখেছে। তবে THE PRINT এ প্রকাশিত তথ্য মতে এখানে পরায় সাড়ে ৩ লাখ এর মতো সেনা+পুলিশ+বিএসএফ মোতায়েন আছে। এবং সেনা ও সিভিলিয়ানদের অনুপাত ১ঃ৪৪ এর কাছাকাছি। অর্থাৎ সেনা ও সিভিলিয়ানদের অনুপাত এতটাই কাছাকাছি যে, পান থেকে চুন খসলে তৎক্ষণাৎ সেনা ও পুলিশ এসে হাজির হয়। অথচ এমন এক জায়গায় যখন ভয়াবহ হামলা ঘটে, তখন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার কেউ কিছু টেরও পায় না! এ যেন গোয়েবলসকেও হার মানানো মিথ্যার রাজনীতি।

এর মাধ্যমে মূলত মোদি আবারও প্রমাণ করলেন যে ,

“লাশের রাজনীতিতে তিনিই সেরা খেলোয়াড়।”

অনেকে হয়তো বলবেন, ভিন্ন রাষ্ট্রের বিষয়ে এতটা আগ্রহ বা আলাপ যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতের বিজেপি-আরএসএস এর সাম্প্রদায়িক সহিংসতাবাদী রাজনীতির ভয়াবহ প্রভাবের অনেকটা বাংলাদেশকে বহন করতে হয়।

আমরা কখনোই চাই না আমাদের ঠিক পাশেই আরেকটি ‘ইসরায়েল’ জন্ম নিক। এটি এখন শুধু একটি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ নয়, বরং আমাদের সার্বভৌমত্বের জন্য এক চরম হুমকি।

১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধ, ২০০১ সালের বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত সংঘর্ষ, ২০১৯ সালে ভারত পাকিস্তানে বিমান হামলা চালায় এবং পাকিস্তান তাঁর পাল্টা জবাবে ভারতের সামরিক বিমান ভূপাতিত করে ভারতীয় উইং কমান্ডার অভিনন্দন কে আটক করে। পরে ভারত অনেকটা গোপন মুচলেকা আর জেনেভা কনভেনশনের দোহাই এবং পাকিস্তানের সহমর্মিতায় অভিনন্দন কে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। তবে এর মাধ্যমে ভারতের সামরিক আস্ফালন অনেকটা ই ধূলায় পর্যবসিত হয়।

সুতরাং সামগ্রিক বিবেচনায় কখনোই ভারত নিজেকে এই উপমহাদেশের শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণ করতে পারেনি। চারপাশে একটিও প্রকৃত বন্ধুদেশ নেই।

ভারত যদি এইভাবে বারবার সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে যায়, তাহলে শুধু ভারত নয়, গোটা উপমহাদেশেই অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে। যার চূড়ান্ত মূল্য ভারতকেই দিতে হবে।

এই উপমহাদেশ এখন আর আগের মতো নেই। হায়দ্রাবাদ, জুনাগড়, কাশ্মীর, মনিপুর, সিক্কিম দখলের মতো যুগ পেরিয়ে গেছে। এখন চীন, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এমনকি মালদ্বীপ পর্যন্ত ভারতের ক্রমবর্ধমান হস্তক্ষেপ এবং এই দলান্ধ উগ্রবাদী পপুলিজম নিয়ে উদ্বিগ্ন। ভারতের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আস্থা দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে।

একটি দেশ চারপাশে শত্রু রেখে কখনোই এগোতে পারে না। ভারত যতদিন এটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হবে, ততদিন দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো স্থিতিশীলতা আসবে না।

বাংলাদেশে ৫ আগস্টের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত তার সর্বশেষ বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু হারিয়েছে। এই বাস্তবতায় ভারত যদি আরও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করতে চায়, তাহলে সেটা গোটা অঞ্চলকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। চীন ও পাকিস্তান ইতোমধ্যেই বসে আছে এমন সুযোগের অপেক্ষায়। বিজেপি সরকার যেন নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই সেই দরজাটিই খুলে দিচ্ছে।

আগামী ৫-১০ বছরে উপমহাদেশে বড় ধরনের ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভৌগোলিক সীমানা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য—সবকিছুই পাল্টে যেতে পারে। ভারতের এই দলান্ধ উগ্রবাদী পপুলিস্ট রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতা যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে এই পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হবে। দেখা যাক, ভবিষ্যৎ কী নিয়ে আসে।

আমি মনে করি আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে উপমহাদেশে বড় ধরনের ভৌগলিক এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভৌগোলিক সীমানা থেকে শুরু করে আঞ্চলিক শক্তির ভারসাম্য—সবকিছুই পাল্টে যেতে পারে। সামগ্রিক পরিস্থিতি, আঞ্চলিক মেরুকরণ এবং অভ্যন্তরীণ চাপ সেই পরিবর্তনের পূর্বাভাসই দিচ্ছে। ভারতের এই দলান্ধ উগ্রবাদী পপুলিস্ট রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতা যদি এভাবে চলতে থাকে, তবে এই পরিবর্তন আরও ত্বরান্বিত হতে পারে।

দেখা যাক, ইতিহাস কীভাবে তাঁর পরবর্তী অধ্যায় রচনা করে…