ধুলামাখা চেয়ারে বসা এক ব্যক্তি, মুখ তাঁর স্কার্ফে ঢাকা। ক্ষেপণাস্ত্র কিংবা ট্যাংকের গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন ভবনের এক কোনায় চেয়ারে বসে আছেন বিদ্ধস্থ এক ব্যক্তি। রক্তে ভেসে যাওয়া শরীরে কাবু দেহ। কিন্তু অস্পষ্ট ড্রোন ফুটেজে এক মুজাহিদের শেরদিলের প্রতিচ্ছবি। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও যিনি স্বীকার করেননি পরাজয়। ভেঙে যাওয়া বাহুর ক্ষতস্থানের চারপাশে ইলেকট্রিক তার বেঁধে রক্তপাত বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন পাশাপাশি ড্রোনের দিকে ছুঁড়ে মারেন লাঠি। জীবনের শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত বীরের মতো লড়াই করে শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেন করেন তিনি।
পরবর্তীতে ড্রোনের এই ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। উঠে আসে চেয়ারে বসা এক মুজাহিদের আত্মত্যাগের গৌরবময় দৃশ্য। চেয়ারটি হয়ে যায় ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এাটই সেই চেয়ার, যে চেয়ার শহীদি কাফেলার সারথি হয়েছিলো অবিস্মরণীয় এক মুজাহিদের শাহাদাতের পরশ পেয়ে। সেই শহীদ হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার।
সময়ের বাঁকে ৩৬ জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে উন্মোচিত হয়েছে স্বৈরাচারী জুলুমের সময়কার অনেক অন্ধকার দিক। আল-জাজিরার সেই আয়নাঘর নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছিল বিভীষিকাময় এক অন্ধকার নির্যাতন কক্ষের প্রতিচ্ছবি।
গতকাল প্রকাশিত হয়েছে তারা ক্ষুদ্রাংশ। যেখানে ভাইব্রেশন চেয়ার। যেখানে নিরীহ মানুষদের চেয়ারে বসিয়ে প্রচন্ড জোরে ঘুরানো হতো। নিস্তব্ধ একটি রুমের মাঝে একটিমাত্র চেয়ার।
কিন্তু তার প্রতিটি অনুতে জমে আছে অজস্র মজলুমের আত্ম চিৎকার। যারা বছরের পর বছর আটকে রয়েছে অন্ধকার এক ঘরে। দিন, মাস, বছরের ঠিক নেই। সূর্যের আলো নেই। আছে শুধু বিকট এক্সহস্ট ফ্যানের শব্দ আর অবর্ণনীয় অমানুষিক নির্যাতন।
সেই চেয়ার হতবিহ্বল এবং বাকরুদ্ধ করেছে মানুষকে। স্টিলের একটি চেয়ার যেন বলছে সেইসব জানা অজানা মজলুমদের কথা যাদের জীবন হয়তো শেষ হয়েছিলো চেয়ারের ঘূর্ণনে।
চেয়ার কথা বলতে পারে না। কিন্তু খানিক সময়ের জন্য যদি এই চেয়ারকে বাকশক্তির মোজেজা দেয়া হতো তাহলে হয়তো চেয়ারের জমা থাকা আর্তচিৎকারে কেঁপে উঠতো এই জমীন। তবু নিস্তব্ধ সেই চেয়ারের দিকে তাকালে মনে হয় সময়ের নির্যাতন গুলো যেন চলমান ফুটে উঠছে চেয়ারের স্টিলের দেহে।