৬ ডিসেম্বর: বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন – ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়

Photo of author

আরশাদ আল গালিব

আজকের দিনটি পৃথিবীর ধর্মীয় সম্প্রীতির ইতিহাসে এক মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক অধ্যায়ের স্মারক। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর, উগ্র ধর্মীয় হিন্দুত্ববাদ ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মিশেলে অযোধ্যার রামকোট পাহাড়ে অবস্থিত ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে ভেঙে ফেলা হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের ফৈজাবাদ জেলার এই স্থাপনাটি ১৬ শতকে নির্মিত হয়েছিল, যা বহু শতাব্দী ধরে এক ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক ছিল।

বিজেপি ও আরএসএস সমর্থিত উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো দাবি তোলে যে বাবরি মসজিদটি নাকি প্রাচীন রাম মন্দির ভেঙে নির্মিত হয়েছিল। এই দাবি ঐতিহাসিক প্রমাণ ছাড়াই প্রচারিত হয়, যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করা এবং রাজনৈতিক ফায়দা লুটে ক্ষমতায় আরোহণের ভোট ব্যাংকের রাজনীতি করা।

তাদের এই উগ্র পরিকল্পনা এক সময় সফল ও হয়। অভাবনীয় ভাবে একদল সন্ত্রাসী প্রবল আক্রোশে পূর্ব-পরিকল্পিত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদকে ভাঙতে।

১৯৯২ সালের এই দিনে, লাখো উগ্র সন্ত্রাসী বাবরি মসজিদ চত্বরে জড়ো হয়ে পরিকল্পিতভাবে মসজিদটি ভেঙে ফেলে। এ ঘটনায় শুধুমাত্র ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি নয়, দেশের সাংবিধানিক নীতিমালাও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ধ্বংসযজ্ঞ সরাসরি বিজেপি ও আরএসএস-এর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়েছিল, যা সারা বিশ্বের কাছে তাদের সন্ত্রাসবাদী মুখোশ উন্মোচন করে।

মসজিদ ভাঙ্গা শেষ হয় আর মসজিদের সাথে ভেঙ্গে পড়ে এই উপমহাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির বন্ধন। উপমহাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বেদনাদায়ক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। মুফতে লাভ হয় কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের কিন্তু লাশের স্তুপে আর দাঙ্গার ঢলে বিপর্যস্ত হয় সমগ্র উপমহাদেশ। যেখানে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান। হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের ইতিহাসে এটি একটি গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।

কীভাবে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও প্রতিহিংসার রাজনীতি মিলে একটি জাতির ঐক্য ও সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে পারে তার নমুনা এই ঘটনা। এই ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ঘৃণা ও বিভাজন আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে, এবং এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে শিখিয়েছে যে ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করে ক্ষমতার লালসা পূরণ করা মানবতার পরিপন্থী। আজকের দিনে আমরা অঙ্গীকার করি, কোনো ধর্মীয় স্থাপনা বা বিশ্বাস যেন রাজনৈতিক হাতিয়ার না হয়।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের এই দিনে বিভাজনের রাজনীতি রুখে দেয়া এবং একটি শান্তিপূর্ণ ও সমানাধিকারের সমাজ গড়ার জন্য একসঙ্গে কাজ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

মসনদ-ই-ইনসাফ কাঁদে আজ,
জালিমের হাত ভাঙে কিবলা।
তাসুবে মখমুর মন,
তোমার ইমারত করল সাবহা।

তাসবিহ-ই-হক কাঁদে আজ,
আদল-ই-ইলাহি চায় পুনর্জাগরণ।
তোমার রূহ আমাদের দিল-ই-ইমান,
তোমার স্মৃতি আমাদের আহবান।

Leave a Comment