সময়টা বেশ আগের। শাহবাগের সেই জিঘাংসাময় দিনগুলো পত্রিকার পাতায় আর দূরদর্শনের পর্দায় ফুটে উঠতো। জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘৃণ্য ও বর্বরোচিত দৃশ্য ভেসে আসতো। শাহবাগ কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলো বেহায়াপনার এক নির্লজ্জ প্রতিচ্ছবি। জামায়াত কে কোনঠাসা করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদী কুশীলবেরা।
জিঘাংসার আগুনঝরা সেইসব দিনে সবাই যখন হাটছিলো স্রোতের সাথে। সে সময় একজন মানুষ বরাবরের মতো কলম তুললেন, উন্মোচন করলেন শাহবাগের স্বরূপ, তিনি হলেন মাহমুদুর রহমান। প্রকাশিত হলো "শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি" নামক অবিস্মরণীয় সেই রেড লাইন। একে একে ভেঙে পড়তে শুরু করলো শাহবাগের সেই রঙিন চশমার ঘর। জাতির সামনে উন্মোচিত হলো স্বরূপ।
মূলত তখন থেকেই ওনাকে ভালো করে চেনার সুযোগ হয়।
ততদিনে মহিরুহ তে পরিণত হয়েছে আমার দেশ। বাংলাদেশে গণমানুষের কথা বলার একমাত্র গণমাধ্যম হয়ে দাঁড়ালো আমার দেশ। এটাই চক্ষুশূল হলো তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের। পূর্বের মতো আবারো বন্ধ করে দেয়া হলো আমার দেশের প্রকাশনা।
পরবর্তীতে তো সবই নির্মমতার এক প্রতিচ্ছবি। জেলায় জেলায় মামলা হলো সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের নামে। কুষ্টিয়ায় একটি মামলায় হাজিরা দিতে গেলে নির্মমভাবে তার উপর হামলা করে রক্তাক্ত করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।
সেদিনের রক্তাক্ত সেই ছবি অজস্র মানুষের অশ্রুজলে সিক্ত হলেও, প্রতিবাদী হয় নি বাংলাদেশের তথাকথিত মূলধারার বলে দাবি করা গণমাধ্যমগুলি!
আজকে বড় বড় বুলি আওড়ানো প্রথম আলো, ডেইলি স্টার সেদিন নিশ্চুপ থেকে নির্মমতা দেখেছে। আমার দেশ বারবার বন্ধ হলেও প্রতিবাদী হয় নি কোনো সাংবাদিক সংগঠন। পাশে দাড়ায় নি কেউ। একা নিঃসঙ্গ শেরপা রূপে রক্তাক্ত হয়ে লড়ে গিয়েছিলেন তিনি।
এরপর সময়টা প্রবাস জীবনের। গুম খুনের বাংলাদেশে জীবনের নিরাপত্তা তাকে বাধ্য করে প্রবাস জীবন বেছে নিতে। সেখানে থেকেই তিনি চালিয়ে যান তার কলম ও প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। মনোনিবেশ করেন বেশ কিছু গবেষণায়।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যপাত বিরোধীতায় তিনি সর্বাগ্রে থাকা একজন ব্যক্তি। বাংলাদেশের বঞ্চিত অধিকার আদায়ে সর্বদা সরব তিনি। অজস্র তরুনের মাঝে তিনি জ্বালিয়েছেন ফ্যাসিবাদ আর আধিপত্যহীন এক নতুন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
৫ ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে মুক্ত স্বাধীন দেশে পদার্পণ করেন তিনি। তার এই প্রত্যাবর্তন একটি বার্তা দেয়—ন্যায়বিচার ও সত্যের জন্য লড়াই কখনো বৃথা যায় না।
দেশে ফিরেই তিনি ঘোষণা দেন আমার দেশ পত্রিকা আবার প্রকাশ করার। ২২ শে ডিসেম্বর থেকে ইনশাআল্লাহ আবার আসতে যাচ্ছে গণমানুষের পত্রিকা আমার দেশ।
আজকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন তিনি। একটা সময় যার বক্তব্য শুনেছি ফেসবুক/ইউটিউবে, অনুপ্রাণিত হয়েছি এক নতুন ভাবধারার মতাদর্শে। আজকে সৌভাগ্য হলো সশরীরে তাঁর বক্তব্য শোনার।
বরাবরের মতোই তিনি ছিলেন প্রতিবাদ মুখর। বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী ফ্যাসিবাদি শাসন ও ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীর আধিপত্য নিয়ে তিনি সম্যক আলোচনা করেছেন। দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী মনোভাবের। অনুপ্রাণিত করেছেন তরুণ প্রজন্মকে। মানারতের শহীদ হওয়া দুই ভাইয়ের কথা তাঁকে আবেগতাড়িত করেছে। তিনি তাঁদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন।
যতটুকু সময় তিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন পুরোটা সময় মনোযোগ দিয়ে শোনা হয়েছিল তাঁর কথা। প্রগাঢ় শব্দচয়ণ, যথাযথ বাক্যের প্রয়োগ, পরিমিত উপমা আর বিপ্লবী দৃষ্টিভঙ্গির সংমিশ্রণে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি কথাগুলো।
মাহমুদুর রহমানের সংগ্রাম আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহসই একজন মানুষকে অমর করে তোলে।
"দেশ ও স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে তাকে সালাম।"