ইজ্জউদ্দিন আবদুল কাদির ইবনে মুস্তাফা ইবনে ইউসুফ ইবনে মুহাম্মদ আল-কাসসাম
জন্ম ১৯ ডিসেম্বর ১৮৮২ সিরিয়ার উত্তর পশ্চিমে জাবলাহ তে জন্মগ্রহণ করেন। যা ছিলো তৎকালীন উসমানীয় সাম্রাজ্য অন্তর্গত।
তিনি এমন একটা সময় জন্মগ্রহণ করেন যখন নানাবিধ কারনে উসমানীয় খেলাফত ছিলো পতনোন্মুখ।
তার বাবা ছিলেন উসমানীয় খেলাফতের আদালতের একজন কর্মকর্তা। তিনি তাঁর জন্মস্থান জাবালাহ থেকে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে ইরাকে চলে আসেন এরপর ১৯০২ সালে তিনি মিসরের কায়রোতে আসেন এবং আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শুরু করেন। সেখানেই তার সাথে পরিচয় ঘটে জামাল আল দ্বীন এর অনুসারী মুহম্মদ আব্দুহুর সাথে। বিকাশ ঘটে তাঁর চিন্তাধারার ও ইসলামী রূপকল্পের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে একসময় তিনি ফিরে আসেন নিজ জন্মভূমি জাবালাহ তে। সেখানে শিক্ষকতা ও ইমামতি শুরু করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে ইসলামি নবজাগরণের কাজ। তাঁর দাওয়াতি কাজকর্মের প্রভাব পড়তে থাকে তাঁর এলাকার মানুষের উপর। সম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ এর বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে থাকেন তাদেরকে।
তাঁর এই মেহনতী এবং অনলবর্ষী বক্তব্যগুলো মানুষকে উসমানী খেলাফতের দিকে ঐক্যবদ্ধ রাখে। তিনি আরব জাতীয়তাবাদ এবং ঔপনিবেশিক সম্রাজ্যবাদের ভয়াবহতা বোঝাতে সক্ষম হন।
এরপর ই শুরু হয় মূলত লড়াই। ছোট্ট এই জনপদ নিয়েই তাঁর শুরু হয় এক নবযাত্রা। ইতালি লিবিয়ায় আগ্রাসন চালালে সেখানে তিনি অর্থ ও স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে সহায়তা করেন।
তবে এরপরই আসে তাঁর এই জনপদের উপর হুমকি। ইতিমধ্যে ফ্রান্সের কাছে উসমানী বাহিনী পরাজিত হলে জাবালাহ অরক্ষিত হয়ে যায়। তখন আল কাস্সাম নিজেই জনপদের মর্দে মুজাহিদ দের নিয়ে একটি প্রতিরোধ বাহিনী গড়ে তোলেন। কিন্তু সুবিশাল এই ভূখণ্ডে তার এই ক্ষুদ্র বাহিনী খুব বেশিদিন টিকতে পারে নি।
তবে তিনি পরাজয় বরণ না করে সিরিয়া ত্যাগ করে সরে আসেন ফিলিস্তিনের দিকে। বসবাস ও সংগঠিত শুরু করেন। বিরোধিতা করেন সেখানে ইহুদি পূনর্বাসনের। আবার এখানে জাগিয়ে তুলেন সম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধর মানসিকতা। বিট্রিশ কর্তৃক ইহুদি পূনর্বাসনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি একটি সংগঠিত বাহিনী নিয়ে সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি সফলতা ও লাভ করেন। তাদের এই প্রতিরোধে ইহুদিদের অবৈধ অভিবাসন বন্ধ হয়। তবে চটে যায় ইহুদি লবী ও ব্রিটিশ সম্রাজ্য।
ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ সম্রাজ্য তার বিরুদ্ধে মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে। তখন তিনি তাঁর কিছু সাথি সহ পুনরায় সংগঠিত আত্মগোপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইয়াবেদ পাহাড়ে যান। কিন্তু তার দলেই থাকা গুপ্তচর বিট্রিশ দের জানিয়ে দেয় অবস্থান। ফলে সুসজ্জিত ব্রিটিশ বাহিনী ঘিরে ফেলে সম্পূর্ণ স্থান। তবুও তারা আত্মসমর্পণ করেন নি। কয়েকজন সাথী সহ বীরের মতো লড়াই করে শহীদ হন আল কাস্সাম।
একটা সময় বৃটিশ এবং ইহুদিদের চক্রান্তের গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। তিনি শহীদ হওয়ার পর বৃটিশ এবং ইহুদিরা নিশ্চিন্ত হওয়ার ফুরসত পাবে ভেবেছিলো।
কিন্তু না, আল কাস্সাম এর সাথীরা ভুলে যায় নি আল কাস্সামের লক্ষ্য এবং অনুপ্রেরণাকে। আল্লাহর উপর অবিচল আস্থা ও দৃঢ় বিশ্বাস কে পুঁজি করে আল কাস্সামের সাথীরা আবারো সংগঠিত হয় এবং শুরু করে প্রতিরোধ। যা নানা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে চলছে আজও। তাঁর আদর্শ থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয় ফাতাহ। যদিও পরে সরে যায় সেখান থেকে। প্রতিরোধ শুরু হয় সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের। শত বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে তারা আজও সেই নতুন ভোর, নতুন দিনের কথা ভেবে এগিয়ে যাচ্ছে সমর পানে যে জজবা তাঁদের দেখিয়ে গিয়েছিলেন নিভৃত জনপদের এক বুজদিল মুজাহিদ আল কাস্সাম। জাবালাহ এর সেই বীর মুজাহিদ আজ ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের এক অনুপ্রেরণা এক নবজাগরণের প্রতীক।
হামাসের সবচেয়ে আধুনিকতম সশস্ত্র শাখার নাম আজ আল কাস্সাম বিগ্রেড। যেখানে প্রতিনিয়ত তাঁরা অবরুদ্ধ থেকেও সম্পূর্ণ নিজেদের কলাকৌশল ব্যবহার করে তৈরি করে অস্ত্র। ইসরায়েলের মিলিয়ন ডলারের আয়রণ ডোম কে পরাভূত করে কাস্সাম বিগ্রেডের শত ডলারের রকেট। বিস্ময়কর ই বটে।
ইতিমধ্যে কাস্সাম বিগ্রেড নিজেদের প্রযুক্তিতে একটি স্বল্পপাল্লার রকেট ও তৈরি করেছে যার নাম ও দিয়েছে এই মুক্তিকামী মুজাহিদ আল কাস্সাম এর নামে।
আজকের এই দিনে ২০ নভেম্বর ১৯৩৫ সালে শাহাদাৎ বরন করেন এই স্বাধীনতাকামী বীর সেনানী। তবে তার মতাদর্শ আজও প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করে চলছে ফিলিস্তিন সহ সারা বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণকে।