আজ, ২৭ অক্টোবর, ২০২৩, বাংলা লোকসঙ্গীতের অন্যতম কিংবদন্তি শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের জন্মদিন। তিনি ১৯২২ সালের এই দিনে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার তালুকদারহাটে জন্মগ্রহণ করেন।
আব্বাসউদ্দীন আহমদ ছিলেন একজন প্রতিভাবান সঙ্গীতশিল্পী, সুরকার, ও সঙ্গীত পরিচালক। তিনি বাংলা লোকসঙ্গীতকে বিশ্বদরবারে পরিচিতি করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪০-এর দশকে আব্বাসউদ্দীন আহমদ ঢাকায় আসেন এবং গান গাওয়া শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
তার প্রথম রেকর্ডের গান ‘কোন বিরহীর নয়ন জলে বাদল মরে গো’ ও অপর পিঠে ‘স্মরণ পায়ের ওগো প্রিয়’ বাজারে বের হবার পর পরই সাড়া পড়ে যায়। আব্বাস উদ্দিন ছিলেন প্রথম মুসলিম গায়ক যিনি আসল নাম ব্যবহার করে এইচ এম ভি থেকে গানের রেকর্ড বের করতেন। রেকর্ডগুলো ছিল বাণিজ্যিকভাবে ভীষণ সফল।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা 'ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' তাঁর গাওয়া প্রথম বাংলা ইসলামী গান গ্রামোফোন রেকর্ডে বের হয়। আব্বাস উদ্দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক সভায় গান গেয়ে বাঙালিদের উদ্বুদ্ধ করতেন। গাইতেন 'ওঠরে চাষী জগৎবাসী, ধর কষে লাঙল'।
আব্বাসউদ্দীনের রেকর্ড করা গানের সংখ্যা প্রায় সাতশত।
আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ছিলেন একজন অভিনেতাও। তিনি মোট ৪টি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এই ৪টি সিনেমা হলো ‘বিষ্ণুমায়া’ (১৯৩২), ‘মহানিশা’ (১৯৩৬), ‘একটি কথা’ এবং ‘ঠিকাদার’(১৯৪০)।
আব্বাসউদ্দীন আহমদ বাংলা লোকসঙ্গীতকে বিশ্বদরবারে পরিচিতি করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৬০-এর দশকে ইউরোপ, আমেরিকা, ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সফর করে বাংলা লোকসঙ্গীত পরিবেশন করেন।
সঙ্গীতে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি মরণোত্তর প্রাইড অব পারফরমেন্স (১৯৬০), শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯) এবং স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (১৯৮১) ভূষিত হন।
পল্লীগানের এই মহান সম্রাট ১৯৫৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর বুধবার বাংলার কোটি হৃদয় ভাসিয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তাঁর গান আজও বাংলা লোকসঙ্গীতের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে রয়েছে। তার সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সন্তান মোস্তফা জামান আব্বাসী, ফেরদৌসি রহমানসহ লক্ষ ভাওয়াইয়া শিল্পী এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন ভাওয়াইয়া সংস্কৃতিকে।
আজ, আব্বাসউদ্দীন আহমদের জন্মদিনে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর গান আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে।