স্বৈরাচারের সবচেয়ে বড় দোসর ছিলো বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা। আর এর অন্যতম কুশীলব ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। ঢোঁড়া সাপ কে এনাকোন্ডা তে পরিণত করতে তার অবদান অনস্বীকার্য।
এবিএম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অবসরের এক সপ্তাহ আগে তিনি দেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটি করেন। তিনি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রাজনৈতিক প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দেন।1
যেহেতু তার অবশিষ্ট সময় ছিলো মাত্র ৭ দিন। তাই ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশটি দেন। যেহেতু তাঁর সময় শেষ সেহেতু খায়রুল হক আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে সই করতে পারেন নি সেসময়। পরে বেআইনিভাবে ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণাকারী সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক রায়ে সই করে আপিল মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।2
তবে এর আগেই সংক্ষিপ্ত আদেশ এর উপর ভিত্তি করে ২০১১ সালের ৩০ জুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় সংসদে। রায়ের কপি প্রকাশের আগেই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।3
সে সময় আপিল বিভাগের তিন জন বিচারপতিও ভিন্নমত পোষণ করে এই ব্যবস্থাকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করতে সম্মতি দেননি। অন্য তিন জন বিচারপতি অবশ্য তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
এরপর বিচারপতি খায়রুল হক নির্ধারক ভোট নেন এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হয়।
তখন যদি খায়রুল হক নির্ধারক ভোট ভিন্নমত পোষনকারীদের সাথে থাকতেন। তাহলে আজ দেশের এই পরিস্থিতি হত না।
কিন্তু না , তিনি সব অগ্রাহ্য করে নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে রায় দেন। যার ফলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ম্যান্ডেট পেয়ে যায় আওয়ামী লীগ। যার ফলাফল দেখেছি ২০১৪, ১৮ আর ২৪ এ।
আর এই গোলামির পুরষ্কারস্বরূপ খায়রুল হককে ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তিন বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এ পদে তিনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির প্রাপ্য বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধাদি পেয়ে আসছিলেন। তারপর থেকে তিন মেয়াদে তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। শেখ হাসিনার পলায়নের পর ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট এই পদ থেকে পদত্যাগ করেন।4
দেশের বিচার বিভাগকে মেরুদন্ডহীন করতে ও তার অবদান অনস্বীকার্য। বিচার বিভাগের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশকে তিনি লীগ সরকারের সমর্থনে দলদাসে পরিণত করেছিলেন।
দেশের গনতন্ত্র ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে আওয়ামী লীগ যেমন দোষী তেমনি খায়রুল হক ও কালপ্রিট।
বিগত ১৯ আগস্ট এ এই বিচার বিভাগের কলঙ্ক কুখ্যাত ব্যাক্তি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে বিচারক হিসেবে ‘দুর্নীতি ও বিদ্বেষমূলক’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে বেআইনি রায় প্রদান ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে দণ্ডবিধির ২১৯ ও ৪৬৬ ধারায় শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে।5
আশা করি, যেই বিচার ব্যবস্থা তিনি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন সেই বিচার ব্যবস্থা পুনর্গঠিত হয়ে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ করে এই ঘৃণ্য লোকটার স্বৈরাচারের সমপরিমাণ শাস্তি নির্ধারণ করবে। যা আগামী দিনে যেন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে দলদাস হওয়ার করুন পরিনতি হিসেবে।
ইনকিলাব জিন্দাবাদ………
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)–এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার এর বই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি পড়তে পারেন।
আর সংক্ষিপ্ত ধারনা পেতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের ইতিহাসটি ছিল প্রতারণা ও স্বার্থপরতার | প্রথম আলো (prothomalo.com) এই লেখাটি পড়তে পারেন
তথ্যসূত্র
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা – BBC News বাংলা ↩︎
- banglanews24.com/print/138562 ↩︎
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত (bdnews24.com) ↩︎
- আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি খায়রুল হকের পদত্যাগ | প্রথম আলো (prothomalo.com) ↩︎
- সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা | The Daily Star Bangla ↩︎