ভারতীয় আধিপত্যবাদের আদ্যোপান্ত

Photo of author

আরশাদ আল গালিব

বানের জলের সাথে যুদ্ধ করে শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে রয়েছে বাংলার আপামর জনসাধারণ। বিগত ১৫ বছরের শাসনামলের সীমাহীন দুর্নীতি আর দেশ বিক্রির করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পায় নি নদীগুলোও। ভারত অন্যায্য ভাবে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর উপর বাঁধ দিয়েছে একের পর এক। পানির ন্যায্য হিস্যা কখনো দেয় নি। তাঁবেদার হাসিনা সরকারকে ব্যবহার করে একের পর এক ভূখণ্ডে চালিয়েছে অন্যায্য আগ্রাসন।

বাঁধ দেয়ার ফলে নাব্যতা হারিয়েছে দেশের সব নদী। পানির নিয়মিত প্রবাহ না থাকায় পলি জমে জমে ভরাট হয়েছে নদীগুলোর তলদেশ। ফলে অতিরিক্ত পানির ভার এখন আর কোনো নদী বহন করতে পারে না।

এসবের মূল কারন ভারতের অন্যায্য এবং একরোখা আচরণ। বিশেষ করে বিজেপি সরকার এসব ক্ষেত্রে এক কাঠি সরেস। ভারত সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ যাদের সাথে বিশ্বের অনেকগুলো দেশের সীমান্ত থাকার পরও কোনো দেশের সাথেই তাঁদের সম্পর্ক ভালো না।

চিন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মায়ানমারের সাথে রয়েছে ভারতের সীমান্ত। কিন্তু এর মধ্যে একটা দেশের সাথেও ভারতের সম্পর্ক ভালো নেই। প্রতিটি দেশের সাথেই কমবেশি সাপে নেউলে সম্পর্ক। আর এর মূল কারন ভারতীয় আগ্রাসন। ৪৭ এ স্বাধীনতার শুরু থেকেই এই আগ্রাসনের সূত্রপাত।

সিক্কিম, অরুনাচল, হায়দ্রাবাদ, মেঘালয় সবখানেই রাজনৈতিক ও ভৌগলিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে ভারত প্রকারান্তরে দখল করে নিয়েছে।

এখন একটা সহজ ভাষায় আসেন, একটা দেশের সাথে সীমান্তবর্তী ২/১ টা দেশের সাথে সমস্যা থাকলে ধরে নেয়া যায় বাকি দেশ খারাপ সেই দেশ ভালো। অন্য দেশেগুলোর কারনেই সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে।

কিন্তু এখানে দেখেন সীমান্তবর্তী ৭ টা দেশের সাথেই ভারতের সম্পর্ক চরম খারাপ!

শুধুমাত্র ভুটান ও মায়ানমার এর সাথে সম্পর্ক কিছুটা ভালো। তাছাড়া বাকি ৫ দেশের সাথেই সম্পর্ক চরম রকমের খারাপ। এর মূল কারন অনুসন্ধান করলে দেখা যায় অযথা উসকানি মোড়লপনা দেখানো, সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, দেশের অভ্যন্তরে অন্যায্য হস্তক্ষেপ, সর্বোপরি পররাষ্ট্রনীতির থেকে গোয়েন্দা সংস্থা র এর উপর অধিক নির্ভরশীল হওয়া। যার কারনে প্রতিটি দেশের আপামর জনসাধারণের তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে ভারতের প্রতি। বিশেষ করে বিজেপির শাসনামলে এই ক্ষোভ আরো তীব্র হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে একের পর এক প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক বিনষ্ট হয়েছে।

১৯৭১ সালে বাংলা সৃষ্টির সময় ভারত সহায়তা করেছিলো। তখন সুযোগ ছিলো বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন করার সুযোগ। কিন্তু না, স্বাধীন দেশকে ব্যবহার করে তারা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে মগ্ন হলো। আমাকে একটা খোঁজ দিন যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া সেসব অস্ত্র গুলো কোথায়?

প্রখ্যাত উপন্যাসিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু ঠিকই লিখেছিলেন তখন তাঁর পুর্ব পশ্চিম উপন্যাসে,

“ঢাকায় এতসব বিদেশী জিনিস পাওয়া যায়, এসব তো আগে দেখেনি ভারতীয়রা । রেফ্রিজারেটর, টিভি, টু-ইন-ওয়ান, কার্পেট, টিনের খাবার-এইসব ভর্তি হতে লাগলো ভারতীয় সৈন্যদের ট্রাকে। …”

এরপর বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা নবম সেক্টরের অধিনায়ক মেজর জলিল তার “অরক্ষিত স্বাধীনতা ই পরাধীনতা” বইয়ে বিবৃত করেছেন তৎকালীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর নানবিধ লুটপাটের কথা।

তিনি সার্কিট হাউজে মুক্তিযোদ্ধাদের তত্বাবধানে রেখে কিছু সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করেন। এর ফলে ৩১শে ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর হাতে তিনি বন্দী হন। যশোর সেনা ছাউনির অফিসার্স কোয়ার্টারের একটি নির্জন বাড়িতে তাকে আটক রাখা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গুম হন মেজর জলিল! তাও ভারতীয় বাহিনীর হাতে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কোনো কথা হতে পারে না। সে ঘটনার বিচার কখনো ভারতীয় সেনাবাহিনী করে নি!

গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়, মিল ফ্যাক্টরির মেশিনাদি যন্ত্রাংশ পর্যন্ত লুটপাট করে ভারতীয় সেনারা। পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও খাদ্যশস্য, পাট, সুতা, যানবাহন, এমনকি সমুদ্রগামী জাহাজ, কারখানার মেশিনপত্র, যন্ত্রাংশ পর্যন্ত লুট করে। এই লুটের সম্পদের পরিমাণ ছিলো সবমিলিয়ে সেইসময়ের হিসাবে ২.২ বিলিয়ন ডলার।

একজনকে ভারতীয় বাহিনী এই লুটের অপরাধে কোর্ট মার্শালও করে তাঁর নাম ব্রিগেডিয়ার মিশ্র।

কিন্তু এসব লুটপাটের জিনিস আর কখনো ফেরত দেয়া হয় নি! অথচ এগুলো ছিলো বাংলাদেশের সম্পদ। যেখানে লুটপাট করার কথা ছিলো পাকিস্তানি বাহিনীর সেখানে লুটপাট চালিয়েছে সহায়তাকারী হিসেবে পরিচয় দেয়া ভারতীয় সেনাবাহিনী। বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত বিরলতম ঘটনা এটি যে, সহায়তাকারী বাহিনী দেশ গড়ায় সহায়তা করার বদলে লুটপাট চালায়।

এরপর আসে সহায়তাকারী ভারতীয় সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ। যুদ্ধ যেহেতু শেষ, আর ভারতীয় সেনাবাহিনী এরকম লুটপাট চালাচ্ছে, এদপর নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে তাছাড়া একটা স্বাধীন দেশে অন্য একটি দেশের সেনাবাহিনী এভাবে অবস্থান করতে পারে না। সেজন্য এসব বাহিনী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ভারত সরকারকে বলা হয়।

কিন্তু তৎকালীন সরকার টালবাহানা শুরু করে সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিতে। তারা চেয়েছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে একটা অনুগত ফ্রন্ট খুলতে এখানে। যেটা একটা স্বাধীন দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি। আর এভাবেই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের উপর শুরু হয় ভারতীয় আগ্রাসন।

এর ফলে এদেশের জনগণের মধ্যে ভারত নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। যেখানে স্বাধীনতায় সহায়তাকারী হিসেবে ভারতের ভূমিকা বীরোচিত দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হওয়ার কথা ছিলো সেখানে এসব আগ্রাসনের কারনে ভারতের প্রতি স্বভাবতই বিদ্বেষ বাড়তে থাকে।

যদিও পরবর্তীতে শেখ মুজিবের দৃঢ়তার ফলে ভারত সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। তবুও এই কদিনে ভারতের পুরো ইমেজ ধূলিসাৎ করে দিয়ে যায় সেনাবাহিনীর লুটপাট ও তৎকালীন সরকারের আগ্রাসী সিদ্ধান্ত।

এরপর ১৯৭৫ সালে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা, পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক নদীতে বাঁধ দেয়া, বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধ, পানির ন্যায্য হিস্যা না দেয়া সহ নানাবিধ কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের উপর আগ্রাসন চালানের অপচেষ্টা চালানো হয়।

বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের মানুষের মনে ভারত বিদ্বেষ আরো চরমে ওঠে। এর মূল কারন হলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপ, বিজেপির নেতাদের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য, বিজেপির সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির অপচেষ্টা, সর্বোপরি বাংলাদেশে স্বৈরাচার হাসিনাকে নির্লজ্জ ভাবে সমর্থন দেয়া।

এসবের কারণে ভারত প্রতিবেশী থেকে ধীরে ধীরে পরিনত হয়েছে শত্রু-রাষ্ট্রে। হ্যা এটাই সত্যি। ভারত পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র যাদের সাথে কোনো প্রতিবেশীর সুসম্পর্ক নেই। ভারতের সামনে সুযোগ ছিলো প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিজেকে একটা সুপার পাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার। সুসম্পর্ক বজায় রেখে প্রতিবেশী দেশের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আদলে কোনো ভৌগোলিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করলে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত নিজেকে একটি যোগ্য স্থানে অধিষ্ঠিত করতে পারতো, কিন্তু একরোখা মনোভাব আর নির্বোধ পররাষ্ট্রনীতির কারনে ভারত এখন পরিনত হয়েছে এক নিঃসঙ্গ শেরপা রূপে। হ্যা ভারত একটা বড় রাষ্ট্র। তার পাশে ৩ টা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র। সে হিসেবে ভারত নিজেকে সুপিরিয়র দাবি করে এখনো আরো আগ্রাসন চালাতে পারে।

কিন্তু ভারতের এটাও মনে রাখা প্রয়োজন ভূরাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটানকে কোনোভাবেই ছোটো করে দেখার সুযোগ নেই। ভারতের ১ পাশে আহত সিংহ পাকিস্তান, আরেক পাশে পরাশক্তি চিন নিঃশ্বাস ফেলছে। অপেক্ষা শুধু সুযোগের। ভারতের ভূরাজনৈতিক অক্ষমতার সুযোগ নিয়ে এরা ভারতকে যে কোনো সময় চাপে ফেলতে পারে। লাদাখ, কাশ্মির কিংবা সেভেন সিস্টারের উত্তেজনা ভারতের জন্য চরম বিপদজনক। ভারত নিশ্চয়ই সেই পাইলট অভিনন্দনের কথা ভুলে যায় নি। নিশ্চয়ই ভূলে যায় নি বিএসএফ বনাম বিডিআর এর সেই বড়াইবাড়ির যুদ্ধের কথা।

চিকেন নেক বাংলাদেশ এবং নেপালের বড় একটি অস্ত্র। আর এটি ভারতের দুর্বলতম একটি স্থান। চিন শকুনের নজর দিয়ে সর্বক্ষণ তাকিয়ে আছে এইদিকে। ইতিমধ্যে ভারতের অবিবেচক পররাষ্ট্রনীতির সুযোগ নিয়ে নেপালের উপর চিন একটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। জাতিগতভাবে হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ার পরও ভৌগোলিকতায় হস্তক্ষেপ করার কারনে নেপালের জনগণ চরম ক্ষুদ্ধ ভারতের প্রতি।

আর এই পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশের সাথে বারবার প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যায্য আগ্রাসন চালাচ্ছে। খেয়ালখুশিমতো আচরণ করছে। পূর্বে হাসিনা থাকায় এসব বালখিল্য সুলভ আচরণ বাংলাদেশ বরদাস্ত করেছে।

কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে বিপ্লব পরবর্তী সরকার গঠন হয়েছে। দেশের মানুষ এখন পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক সচেতন। তারা এখন ভালে মন্দ বুঝতে এবং অধিকার আদায় করে নিতে শিখেছে। যারা পাকিস্তান তাড়িয়েছে, স্বৈরাচার মুজিব -হাসিনাকে সরিয়েছে তাদেরকে এত ছোট করে দেখলে ভারত ভূল করবে।

জনগণের এই স্পিরিটকে আমলে নিয়ে আগ্রাসন বন্ধ না করলে ভারতকে চরমভাবে এর মূল্য দিতে হবে।

আমি আমাদের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সেই অবিস্মরণীয় কথাটি আবার উদ্ধৃত করতে চাই,

“বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে আশেপাশের কেউ শান্তিতে থাকতে পারবে না”

হ্যা এটাই সত্যি এবং চরম সত্যি। ভারত যদি বাংলাদেশকে এখনো হাসিনার চোখে দেখে তাহলে এটা ভারতের বোকামি। আর এর ফল ভোগ করতে হবে চরম বাজে ভাবে।

ভূরাজনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। এটাকে হেলাফেলা করার কোনো সুযোগ নেই। আশা করি ভারতের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। নতুবা আগামীর উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দায়ভার ভারতকেই গ্রহণ করতে হবে। যত বড় রাষ্ট্র ই হোক একা চলা বর্তমান দুনিয়ায় বড় কঠিন!

বিজেপির সাম্প্রদায়িক ট্রাম্পকার্ড গত হওয়া নির্বাচনেই আর কাজে লাগে নি। আগামী নির্বাচনে এটা পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে আশা করা যায়। এর মাঝে একের পর এক যদি পার্শ্ববর্তী দেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি হওয়া শুরু হয়। তাহলে সেটা বিজেপির জন্য রাজনীতির কবর হয়ে দাঁড়াবে। সম্ভবত সেইদিন খুব বেশি দূরে নয় যখন বিজেপিও আওয়ামী লীগের কাছাকাছি পরিনতির স্বীকার হবে।

যাইহোক এটা তাদের অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক বিষয়। কিন্তু আমাদের কথা সুস্পষ্ট। হাসিনার নতজানু পররাষ্ট্রনীতির সময় এখন শেষ। ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানে মুখরিত হয়ে সময় এখন ঘুরে দাঁড়াবার। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই, স্থিতিশীল হতে চাই। আমাদের ভৌগোলিক অখন্ডতা রক্ষায় আমরা যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করে নিতে রাজি।

সেদিন বিপ্লবের সময়, আজকে বন্যার সময় আমরা জাত-ধর্ম সব মিলেমিশে একাকার হয়ে একই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলে এসেছি মানুষের পাশে। এরকম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরলতম। ইনশাআল্লাহ আগামীতে কোনো বহিঃশত্রুর সাম্প্রদায়িক ট্রাম্পকার্ড কে আর এদেশে পাত্তা দেয়া হবে না। বানের জলের সাথে এবার ভেসে যাবে সকল সাম্প্রদায়িকতার অপশক্তি।

আশেপাশে এত শত্রু সৃষ্টি করে কেউ কখনো ভালো থাকতে পারে না। একসময় যাদের অজেয় শক্তি বলা হতো সেই ইসরায়েল ও এখন যুদ্ধ বিরতি চাচ্ছে। সুতরাং কাউকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সকল দেশের-ই নিজস্বতা রয়েছে। সেই নিজস্বতায় বাঁধ দিয়ে কিংবা অন্যায্য হস্তক্ষেপ কখনোই কেউ মেনে নিবে না। এটা অতি স্বাভাবিক।

ইতিহাস পরিবর্তনশীল। ভারত সরকার এতদিন বাংলাদেশকে ঘরের পিছনের উঠোন মনে করে যা ইচ্ছে তাই আচরণ করেছে। ফলশ্রুতিতে এদেশের মানুষের মনে সরকারের প্রতি একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

আজকে পাকিস্তানে বাংলাদেশ নিয়ে স্লোগান হচ্ছে। সফট সেন্টিমেন্ট কাজ করছে দুই অংশেই। আগামীর কথা হয়তো বলা যায় না। কিন্তু নিজের দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে আগামীতে বাংলাদেশ, চীন-পাকিস্তান বলয়ে পুরোপুরি ভাবে প্রবেশ করলে সেটা ভারতের জন্য অত্যন্ত খারাপ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। ঘরের চারপাশে শত্রু নিয়ে যত শক্তিশালী প্রতিবেশী ই হোক না কেন, বিপদ একটু হলেও আসবে।

সুতরাং এই ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অগ্রাহ্য করা এ অঞ্চলে চরম অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে। যার জন্য সম্পূর্ণ দায়ভার নিতে হবে ভারতের বর্তমান সরকারকে। অখন্ড ভারত দাবি করে পার্লামেন্টে যে মানচিত্র লটকানো হয়েছে, সেটার পর ভারত সরকারের উদ্দেশ্য প্রতিবেশীদের নিকট দিনের আলোর মত পরিষ্কার। সুতরাং ভৌগলিক অখন্ডতা রক্ষায় প্রতিটি দেশ নিজ নিজ সামর্থ্যের মধ্যে সচেষ্ট হলে দোষ দিতে পারবেন না। ৪৭ এর পর যেমন অনেক রাজ্য কূটকৌশলে যুক্ত হয়েছে, তেমনি পটপরিবর্তনের ফলে কেউ ছুটতে চাইলেও করার কিছু নেই, কারন প্রতিবেশীর সাথে আপনার সম্পর্ক খারাপ। আর বিপদে প্রতিবেশীই সবার আগে এগিয়ে আসে। তবে এরকম অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে আর কেউ আসবে বলে মনে হয় না।

ইনকিলাব জিন্দাবাদ।

Leave a Comment